Tuesday, March 15th, 2016 09:13 pm
আজকের শিশু আগামী দিনের লাশ?
আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে শিশু নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা। গত এক বছরে বেশ কয়েকটি বড় বড় ঘটনা সারাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। তবে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষ করে রাজধানীর রামপুরায় মায়ের বিরুদ্ধে দুই সন্তানকে হত্যার অভিযোগ, কুমিল্লায় সৎ ভাইয়ের বিরুদ্ধে দুই ভাইকে হত্যার অভিযোগ, ময়মনসিংহে মায়ের বিরুদ্ধে শিশু সন্তানকে হত্যার অভিযোগ। এছাড়াও প্রায়ই নবজাতক সন্তানকে ফেলে দেওয়া হয় ডাস্টবিনে-জঙ্গলে, পাওয়া যায় হাসপাতালের ড্রেনে! এই ঘটনাগুলো আমাদের কী জানায়? শিশুরা কী তার পরিবারেও নিরাপদ নয়। এর বাইরে হাজার নির্যাতন আর হত্যার ঘটনা রয়েছে। কিন্তু পরিবারেই যদি শিশুরা নিরাপদ না থাকে, তাহলে কোথায় নিরাপদ থাকবে? আর এসব ঘটনা বাড়ছেই বা কেন?
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে হত্যার শিকার হয়েছে ৫৬ জন শিশু। যাদের মধ্যে ৯ শিশুকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তাদের মা-বাবার বিরুদ্ধে। ২০১৫ ও ২০১৪ সালে হত্যার শিকার হয়েছে যথাক্রমে ২৯২ ও ৩৬৬ শিশু, যেখানে মা-বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যথাক্রমে ৪০ ও ৪১ সন্তানকে হত্যায় জড়িত থাকার। সংখ্যাগুলো নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। পৃথিবীতে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা মায়ের কোল, বাবার ছায়া। পরিবারের বাইরে আর কোথায় বা নিরাপদ আশ্রয় পাওয়া যায়? কিন্তু সেই পরিবারেই আজ শিশুরা হয়ে উঠছে অনিরাপদ। কিন্তু এমন ঘটনা বাড়ছে কেন? কেনই বা মা-বাবা তার প্রিয় সন্তানকে হত্যা করতে দ্বিধা করছেন না?
আমাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের জীবন-যাত্রার মান উন্নত হচ্ছে। তবে জীবনে চলার পথে প্রয়োজনীয়তাও বাড়ছে, চাহিদারও যেন শেষ নেই। আর এই চাহিদা পূরণে মানুষজন ছুটছে টাকার পিছে। টাকা ছাড়া তো জীবন চলবে না। কিন্তু এই টাকার পিছনে ছুটতে গিয়ে যদি চারপাশটা সামাল না দেওয়া যায়, যদি নিজের জীবন বিপন্ন হয়ে ওঠে, তাহলে কী লাভ হবে টাকা-পয়সা দিয়ে? আর এ কারণেই সামাজিকতা কমছে, কমছে দায়িত্ববোধ, মানুষে মানুষে যোগাযোগ। কাছের মানুষদেরই খবর নেওয়া হয় না, আর অন্য মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তো অনেক পরে!
এসব কারণেই সামাজিক বন্ধন বলে যে শব্দটা রয়েছে, তা এই রাজধানীতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে প্রায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সময় যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের মাঝে, তাতে হয়তো সামাজিক বন্ধনের কিছুটা হলেও অটুট আছে। কিন্তু এই শহরের আর কোথাও তা নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে বের হলেই সব শেষ। পড়াশোনা শেষ হলেই বন্ধনের গিঁট ঢিলা হতে থাকে। শহরের বসবাসরত মানুষের মধ্যে সৌজন্যবোধও কমছে। ব্যস্ততা আর ব্যস্ততার মাঝে সব ফুরিয়ে যাচ্ছে। ‘হাই আর হ্যালো’র মধ্যে সীমাবদ্ধ শহুরে সম্পর্কগুলো। খুব ভালো সম্পর্ক হলে হয়তো পাঁচ মিনিট সময় পাওয়া যায়, এক কাপ চা পানের সুযোগ হয়। এটাও এখন বিরল ঘটনায় পরিণত হচ্ছে! এই শহরে বসবাসরত আমরা কলেজের কয়জন বন্ধুকে শেষ কবে ফোন দিয়েছিলাম, মনে আছে কারো? বরং শহরের বাইরের কোনো বন্ধু ফোন দিলেও হয়তো ঠিকমতো কথাটাও বলা হয় না। কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা একসঙ্গে একই বেঞ্চে পাশাপাশি বসে এতটা বছর ক্লাস করলাম, এতটা সময় আড্ডা দিলাম, অথচ পড়াশোনা শেষ হলে কয়জনের সঙ্গেই বা যোগাযোগটা রাখি?
আমার রুমমেট বড় ভাই আগে প্রায়ই একটা কথা বলত, ‘খাওয়া-দাওয়া শেষ, কোম্পানি বিদেশ’! কথাটির অর্থ আমি অনেক দিনই বুঝিনি। আসলে বুঝতেও চাইনি। তবে একসময় গিয়ে ঠিকই বুঝেছি। কথাটার মর্ম হলো- তোমাকে যতক্ষণ প্রয়োজন ছিল, ততক্ষণ তোমার সঙ্গে কথা হয়েছে, আলাপ হয়েছে, সম্পর্কও ভালো। কিন্তু প্রয়োজন শেষে তোমাকে আর আমি চিনি না। আবার এমনটাও বোঝায়, নিজের প্রয়োজনে কারো কাছে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করা যায়, কিন্তু প্রয়োজন শেষে তাকে আর চেনা যায় না। এমন-কি রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে ধাক্কা খেলেও না! এই শহরের সম্পর্কগুলো দিন দিন এমনই হয়ে যাচ্ছে।
আর সামাজিক বন্ধন বিলুপ্তির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি মানুষই আত্মকেন্দ্রীক হয়ে উঠছে। নিজের বাইরে বেশিরভাগ মানুষই কিছু ভাবতে পারছে না। নিজের সমস্যা হলেই কেবল সমস্যা, অন্যের সমস্যায় ‘কিছু দেখি নাই’ অবস্থা। রাস্তায় কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকলে কেউ এগিয়ে যায় না। কেউ বিপদে পড়লে অন্যরা এগিয়ে যায়। যার একদম বাস্তব উদাহরণ এখনও চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে উঠছে। কোনোভাবেই ভুলতে পারছি না তা। রাজধানীর উত্তরায় কয়েক দিন আগে গ্যাসের চুলা থেকে আগুন লেগে দগ্ধ হয়ে মারা গেছে একই পরিবারের চারজন। দগ্ধ আরেক শিশু তার মা-বাবা ও দুই ভাইকে হারিয়েছেন। সেদিন পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা যদি এগিয়ে আসত, তাহলে হয়তো চারজনকে মরতে হতো না। দগ্ধ মা সুমাইয়া আক্তার হাসপাতালে মারা যাওয়ার আগে বলেন, ‘ওর বাবার (স্বামীকে বুঝিয়েছেন) কোলে পিচ্চিটা। সাততলা থেকে দৌড়ে নামছি আর চিৎকার করছি। প্রথমে চারতলা ও পরে তিনতলায় ফ্ল্যাটের দরজায় কড়া নাড়লাম। ওরা দরজা খুলল। আমাগো দেইখ্যা দরজাগুলো সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দিল। সব স্পষ্ট মনে আছে। বিল্ডিংয়ের নিচে নামলাম। দেখলাম কত মানুষ। কেউ এগিয়ে আসলো না। সবাই তাকাইয়্যা রইল। পুরা কাপড় তো পুইড়্যা গেল। একটা চটের বস্তা দিয়া শরীরটা জড়াই। আল্লাহ মাফ করুন। মানুষ কত অমানবিক। বিল্ডিংয়ের মহিলারা একটা চাদরও আগাইয়্যা দিল না। বললাম- আমি মহিলা; অন্তত একটা চাদর দেন। কিচ্ছু দিল না। নইলে ওদের একটা চাদর বা তোষকই পুড়ত। আমার বাচ্চারা তো বাঁচত। একটা মানুষও সাহায্য করেনি।’
উত্তরার এই ঘটনাটা আমাদের কী জানায়? প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে হয়তো তাদের সবাইকে বাঁচানো যেত। ফুটফুটে শিশুদের আগুনে জ্বলতে দেখেও কেউ এগিয়ে গেল না। উল্টো দরজা বন্ধ করে দিল। এও কী মানুষের পক্ষে সম্ভব? হয়তো বিশ্বাস হতে চাচ্ছে না, কিন্তু ঘটনা তো পুরোটাই সত্য। আমার প্রশ্ন হলো, নিজের সন্তান হলে কী তারা ফেলে দৌড় দিতে পারতেন কিংবা দরজা বন্ধ করতে পারতেন? মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হলে এটা সম্ভব, এর চেয়ে বাস্তব উদাহরণ আর আশপাশে নেই। মানুষের কথা কী বলব, আমি নিজেই ধীরে ধীরে সেই কাতারে চলে যাচ্ছি। এক সময় যে কারো সমস্যা হলেই মাথায় কাজ করত, এ যদি আমার ভাই হতো কিংবা বোন হতো। আমি যদি ওর জায়গায় থাকতাম কিংবা এই সমস্যায় পড়তাম তাহলে কী হতো? এসব চিন্তা থেকে এগিয়েও যাওয়া হতো। এতে কখনও কখনও আবার ঝামেলায়ও পড়তে হতো, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দারুণ এক প্রশান্তি কাজ করত মনে। যদিও এখন এসব চিন্তাই আসে না খুব একটা! সব কিছু পাশ কাটিয়ে চলতে শিখছি আমিও। মাঝে মাঝেই মনে হয়, আমিও ধীরে ধীরে অমানুষ হয়ে যাচ্ছি!
আর মানুষ যত আত্মকেন্দ্রীক হয়ে যাচ্ছে, ছোট হয়ে আসছে তাদের জগৎ, চিন্তার পরিধি। ফলে বাস্তব ক্ষেত্রে অনেক সময়ই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, এমনও হয় যে সেই সমস্যার সমাধান তো করতে পারছে না, আবার কারও সঙ্গে শেয়ারও করতে পারছে না। ফলে বাড়ছে হতাশা। এতে মাথায় ঢুকছে উল্টাপাল্টা চিন্তা-ভাবনা। বাড়ছে মানসিক অস্থিরতা। আর এসব কারণে পরিবারেও বাড়ছে অশান্তি। এর প্রভাব প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পড়ছে শিশুদের উপরেও। অনেক সময় শিশুদের হত্যার শিকারও হতে হচ্ছে।
আমাদের সমাজে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে দেখা যায়, অন্যের ভালো জিনিসটা নিজের মধ্যে পেতে চাওয়া। অপরের ভালো চাকরি নিজের কেন নাই, অমুকের এত টাকা আমার কেন নাই, আমার কবে এত টাকা হবে, কবে পায়ে পা তুলে খাব, এমন নানান ধরনের চিন্তাভাবনা তরুণ থেকে বয়স্ক সবার মধ্যেই দেখা যায়। আবার মা-বাবারা ভাবেন, তমুকের ছেলে এত ভালো ছাত্র আমার ছেলে কেন ভালো না; ওর ছেলে এ প্লাস পেয়েছে, আমার ছেলে কবে পাবে, কেন পাবে না, না পেলে মুখ দেখাব কেমন করে, এমন নানান প্রবণতা আমাদের মধ্যে খুব বেশি। আর এই না পাওয়ার চিন্তা-ভাবনা অনেককেই বিষিয়ে তুলে! যে বিষ ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। এই বিষ শুধু ব্যক্তিকেই ধ্বংস করে না, অনেক সময় পরিবারকেও ধ্বংস করে দেয়!
পাড়া-প্রতিবেশী, সহকর্মী কিংবা বন্ধুদের আর্থিক উন্নতি নিজের মধ্যে দেখতে পায় এই ধরনের মানুষরা। কিন্তু বাস্তবে যা কখনই সত্য নয়। তারা সবসময় কল্পনার জগতে ভেসে বেড়াতে পছন্দ করেন। অলস প্রকৃতির এসব লোকজন যখন বাস্তবে কোনো কাজে নামে তখন হতাশায় ভোগেন। অন্যের উন্নতির সঙ্গে যখন দেখেন- নিজে অনেক পিছিয়ে আছে, তখন তারা চরম হতাশ হয়ে পড়ে, বাড়তে থাকে মানসিক অস্থিরতা। বাড়ে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা। যে কোনো কিছুতে তারা নেতিবাচক চিন্তা করতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা মনে করেন, তাদের দ্বারা আসলে কিছু করা সম্ভব না। এর প্রভাব পড়ে সব ধরনের কাজে। প্রভাব পড়ে চারপাশের লোকজনের উপরও। আর মা-বাবারা এই ধরনের হতাশায় ভুগলে প্রভাব পড়ে সন্তানের উপর। এসময় কোনো দুর্ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিকও না।
হতাশা বা মানসিক অস্থিরতায় ভুগতে থাকা অনেকেই একপর্যায়ে গিয়ে আত্মহত্যা করে। নিজেকেই আর রাখতে চায় না এই সুন্দর ভুবনে। বেশিরভাগ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে হতাশা বা মানসিক চাপ সহ্য করতে না পারার কারণে। যখন কোনো মানুষের নিজের প্রতি আস্থা থাকে না, নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় না, তখন সে অন্যকেও খুন করতে দ্বিধা করে না।
২০০৬ সালের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এক জাতীয় জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৪.৬ শতাংশ মানুষই খুব হতাশা ভোগেন। গত ১০ বছরে এই সংখ্যা এখন নিশ্চয়ই বেড়েছে।
আরেকটা বিষয়, ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোয় যেসব মেগা সিরিয়াল হয়, সেগুলোয় কী দেখানো হয়? পরিবারের ভেতরে হিংসা-দ্বেষ ছড়ানো, কীভাবে পরিবারে ফাটল ধরানো যায়, কীভাবে পরকীয়ায় সফল হওয়া যায়? এসব দেখার ফলে অনেকের চাহিদা পরিবর্তন হচ্ছে, বাড়ছে দাম্পত্য জীবনে কলহ। এর প্রভাব সরাসরি পড়ছে পরিবারে এবং পরিবারের নিষ্পাপ শিশুদের উপর।
প্রেম বা পরকীয়া দুইটার স্বাদই নাকি অমরত্বের স্বাদ! যারা প্রেম করে বা প্রেমে পড়েন, তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে আমার যা মনে হয়, কেউ একজন যখন প্রেমে পড়ে, তখন সে উড়তে থাকে! এসময় প্রেমিক ও প্রেমিকার চোখে চোখে কথা হয়। চোখে চোখ পড়লে অনুভূতি পাওয়া যায় দেহের ভেতর। মন হয়ে উঠে চঞ্চল। এক পর্যায়ে কেউ নিজের মধ্যে থাকে না। কখনও কখনও মাতাল হয়ে যায়। হুশ থাকে না, করে ফেলে অনেক কিছু। এটা হোক প্রেম বা পরকীয়া। আর এ কারণে অনেক সময়ই নিজের সন্তানকে হত্যা করেন কেউ কেউ। কখনও পরকীয়া দেখে বা জেনে ফেলায়, কখনও পথের কাটা দূর করতে!
আর প্রেমের ক্ষেত্রে বিয়ের আগেই অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সন্তান এসে যায়। যার পরিণতিতে প্রায়ই খবর পাওয়া যায়, অমুক জায়গায় নবজাতকের লাশ উদ্ধার। কখনও কখনও জীবিত নবজাতককেও উদ্ধার করা হয়েছে। রাজধানীর পুরাতন বিমান বন্দরের জঙ্গলে এক নবজাতককে কুকুরে যখন কামড়াচ্ছিল, তখন নবজাতকের চিৎকার শুনে উদ্ধার করা হয়। আবার পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি যখন কোনো নারীর গায়ে গিয়ে পড়ে। অর্থাৎ অমানুষ পুরুষগুলো যখন ধর্ষণ করে কোনো নারীকে, আর ধর্ষণের কারণে জন্ম নেওয়া শিশুকে কীভাবে সঙ্গে রাখবেন নারী? এক্ষেত্রেও নবজাতককে ফেলে দিতে দেখা যায়। কয়েক দিন আগেই রাজধানীর বেইলি রোডে এ ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া পরিবারের বাইরেও শিশু হত্যার ঘটনা প্রচুর। এমন কি একসঙ্গে চারজনকে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে হবিগঞ্জে। সিলেটে ঘটেছে পিটিয়ে নির্যাতন করে শিশু হত্যা। খুলনায় পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে এক কিশোরকে। কিন্তু এসব হত্যার শেষ কোথায়। বাইরে কী পরিবারে? কোথাও শিশুরা নিরাপদ নয়। এজন্য কী করা প্রয়োজন, তা এখনই ভাবা দরকার।
যেখানে শিশুদের বেড়ে ওঠার কথা হেসে-খেলে, সেখানে স্বার্থপর এই পৃথিবী শিশুদের জন্য দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। এমনিতেই পড়াশোনা আর শাসনের চাপে শিশুরা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছে না। নেই খেলার মাঠ, নেই পড়ার আনন্দ। জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বইয়ের বোঝা। এত সব সমস্যার মধ্যে এখন অনিরাপদ হয়ে উঠছে শিশুদের জীবন। আর কত শিশুর জীবন প্রদ্বীপ নিভে যাবে কিছু বোঝে ওঠার আগেই? প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও শিশু হত্যার খবর পাওয়া যাচ্ছে। পত্রিকায় আসা সংবাদ ছাড়াও হত্যার ঘটনা ঘটছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই মনের ভেতর প্রশ্ন জমছে, ‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’ প্রবাদটি সামনে হয়তো পরিণত হবে ‘আজকের শিশু আগামী দিনের লাশ’-এ? কিন্তু আমার এই শঙ্কা মিথ্যায় পরিণত হোক, শিশুরা নিরাপদে বেড়ে উঠুক পরিবারে-সমাজে। আর একটি শিশুও যেন হত্যার শিকার না হয়।
শিশু হত্যা বন্ধে, মানুষের লোভ-লালসা-চাহিদা নিয়ন্ত্রণে, সামাজিক মূল্যবোধ ও দায়িত্ব বাড়াতে, মানুষে মানুষের যোগাযোগ বৃদ্ধিতে, প্রেম-পরকীয়ার ফলাফলে সচেতনতা বাড়াতে, হতাশা নিয়ন্ত্রণে এখনই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। সরকারি ও সামাজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু দেশ সমাজের এত সব প্রয়োজন আর চাহিদা মিটাবে কে, কবে?