Saturday 19 March 2016

ইরাকি তরুণ আর জার্মান তরুণীর প্রেম

অধিকাংশ শরণার্থীর মতো আলীও জার্মানিতে এসেছেন মূলত প্রাণ বাঁচাতে৷ ভাগ্যটা ভালো, এসেই পেয়ে যান লেনা নামের এক জার্মান তরুণীর দেখা৷ বাকিটা বানিজ্যিক চলচ্চিত্রের গল্পের মতো৷ আলী আর লেনা এখন বিয়ে করে সংসার পাতার অপেক্ষায়৷

২০১৫ সালে সিরিয়া, ইরাক এবং মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশ থেকে প্রায় ১১ লাখ অভিবাসনপ্রত্যাশী এসেছে জার্মানিতে৷ এমন জনস্রোত সামলাতে গিয়ে দেখা দিয়েছে সংকট৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি এমন সংকটে আর পড়েনি৷ ইউরোপের জন্যও এ এক মহাসংকট৷ সংকট নিরসনের উদ্যোগ হিসেবে ইউরোপে শরণার্থীদের আসার পথ বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্তও নেয়া হতে পারে৷
কিন্তু আলী আর লেনার প্রেমের গল্প শুনলে অনেকেই হয়ত চাইবেন জার্মানিতে যত খুশি শরণার্থী আসুক৷ আগমনে যদি আরো অনেক মানবমানবীর সুমধুর মিলনের গল্প জমে, মন্দ কী!
আলী জার্মানিতে এসেছেন গত বছরের সেপ্টেম্বরে৷ ইরাক থেকে তুরস্ক, তুরস্ক থেকে রাবারের নৌকায় বলকান অঞ্চল হয়ে গ্রিসে, গ্রিস থেকে মেসিডোনিয়া, সার্বিয়া, হাঙ্গেরি আর অস্ট্রিয়া ঘুরে অবশেষে যেদিন মিউনিখে এলেন প্রাণশক্তি বলতে কিছু আর ছিলনা৷ মিউনিখ থেকে ট্রেনে বার্লিন পৌঁছে শরীর চলছিলই না৷
বার্লিন কেন্দ্রীয় রেল স্টেশনেই ‘শরণার্থীদের স্বাগতম' লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন লেনা৷ সঙ্গে কয়েকজন বন্ধুও ছিল৷ সদ্য আসা শরণার্থীদের কোনোভাবে সহায়তা করতেই রেল স্টেশনে গিয়েছিলেন তাঁরা৷



আলী আর তাঁর বন্ধুর তখন বার্লিনে থাকার জায়গা নেই৷ শরণার্থী শিবিরে জায়গা পেতে হলে দু'দিন অপেক্ষা করতে হবে৷ লেনা আর তাঁর বন্ধুরা ওই দু'দিন আলী আর তাঁর দুই সঙ্গীকে এক জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন৷
সেখানেই শেষ হতে পারতো গল্পটা৷ কিন্তু আলী আর তাঁর দুই সঙ্গীকে এক বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজের বাড়িতে ফেরার আগে লেনা একটা ছোট কাগজে নিজের নাম আর টেলিফোন নাম্বারটা লিখে দিয়ে আসায় গল্পটা শেষ না হয়ে শুরু হয়ে যায়৷ একদিন পরই ‘ধন্যবাদ' লিখে টেক্সট মেসেজ পাঠান আলী৷ শুরু হয় মেসেজ চালাচালি এবং তার কিছুদিনের মধ্যেই মন দেয়ানেয়া সারা৷
আলী ২৮ বছরে তরুণ৷ বাগদাদের একটি মেয়ের সঙ্গে প্রেম করেছেন পাঁচ বছর৷ তথাকথিত জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর হামলা সেই প্রেমে ছেদ টেনেছে৷
অন্যদিকে লেনা গত ৬ বছরে কয়েকজন ‘বয়ফ্রেন্ড' পেলেও কারো সঙ্গেই সম্পর্ক টেকেনি৷ আলী প্রথম যেদিন তাঁকে ‘আই মিস ইউ' লিখল, সেদিনও লেনা ভাবেননি অচেনা সংস্কৃতির একটি ছেলের সঙ্গে প্রেম হতে পারে৷ অথচ হলো তা-ই৷ বন্ধুরা বারবার বলেছে, ‘‘সাবধান, ওরা কিন্তু কিছুদিন ভালোবাসার অভিনয় করে, কিন্তু কিছুদিন পরে জার্মানিতে থাকা নিশ্চিত হলেই ছেড়ে যায়৷ দেখো তোমার সঙ্গেও না আবার সেরকম কিছু হয়৷'' লেনা তবু ভালোবেসে ফেলে আলীকে৷

আলীর জন্ম ইরাকের এক গোঁড়া মুসলিম পরিবারে৷ বাপ-চাচারা খুব গোঁড়া৷ তাঁরা মনে করেন, জার্মানির মেয়েরা ‘নোংরা স্বভাবের', কেননা, বিয়ের আগেই তাঁরা যার-তার সঙ্গে শুয়ে পড়ে৷ আলী নিজেই কথাটা বলেছেন লেনাকে৷ তবে নিজের মতামত জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো একটি মেয়েকে জানা আর জেনে তাঁকে বিশ্বাস করতে পারা৷''


আলীর কাছে বিশ্বাসটাই ভালোবাসা৷ তাঁর সংস্কৃতিতেও বিশ্বাসের অনেক গুরুত্ব৷ জার্মানিতে এসেও নিজের সংস্কৃতিকে ভোলেনি আলী৷
তাই প্রথম যেদিন ওর সঙ্গে ঘুমালেন, সেদিন খুব অবাক হয়েছিলেন লেনা৷ শুয়েই বলেছিলেন, ‘কিস মি'৷ কিন্তু আলি সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করলেন সেই অনুরোধ, বললেন, ‘‘দুঃখিত, আমি এখন চুমু খেতে পারবো না৷ ইরাকে আমরা বিয়ের অঙ্গীকার না থাকলে কোনো মেয়ের সঙ্গে বেড়াতেও যাই না৷''
খুব তাড়াতাড়িই বিয়ে করবেন লেনা৷ বিয়ে করবেন আলীকেই৷ পরিবারের সবাই এখন আলীকে চেনে৷ আলীকে সবারই খুব পছন্দ৷ বড়দিনে দাদি লেনা আর আলীর হাতে তুলে দিয়েছেন একটি খাম৷ টাকাভর্তি সেই খামের ওপর দাদি ইংরেজিতে লিখে দিয়েছিলেন, ‘ট্রু লাভ'৷
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পিএইচডি করছেন লেনা৷ আইটি বিশেষজ্ঞ আলীকে পেয়ে তাঁর মনে হয়, অন্য জার্মান তরুণীদেরও উচিত শরণার্থীদের বিয়ে করা৷


আপনারও কি এমন কোনো প্রেমের গল্প জানা আছে? তাহলে জানিয়ে দিন আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

Wednesday 16 March 2016

আজকের শিশু আগামী দিনের লাশ?

    আজকের শিশু আগামী দিনের লাশ?





আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে শিশু নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা। গত এক বছরে বেশ কয়েকটি বড় বড় ঘটনা সারাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। তবে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে। বিশেষ করে রাজধানীর রামপুরায় মায়ের বিরুদ্ধে দুই সন্তানকে হত্যার অভিযোগ, কুমিল্লায় সৎ ভাইয়ের বিরুদ্ধে দুই ভাইকে হত্যার অভিযোগ, ময়মনসিংহে মায়ের বিরুদ্ধে শিশু সন্তানকে হত্যার অভিযোগ। এছাড়াও প্রায়ই নবজাতক সন্তানকে ফেলে দেওয়া হয় ডাস্টবিনে-জঙ্গলে, পাওয়া যায় হাসপাতালের ড্রেনে! এই ঘটনাগুলো আমাদের কী জানায়? শিশুরা কী তার পরিবারেও নিরাপদ নয়। এর বাইরে হাজার নির্যাতন আর হত্যার ঘটনা রয়েছে। কিন্তু পরিবারেই যদি শিশুরা নিরাপদ না থাকে, তাহলে কোথায় নিরাপদ থাকবে? আর এসব ঘটনা বাড়ছেই বা কেন?
বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে হত্যার শিকার হয়েছে ৫৬ জন শিশু। যাদের মধ্যে ৯ শিশুকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তাদের মা-বাবার বিরুদ্ধে। ২০১৫ ও ২০১৪ সালে হত্যার শিকার হয়েছে যথাক্রমে ২৯২ ও ৩৬৬ শিশু, যেখানে মা-বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যথাক্রমে ৪০ ও ৪১ সন্তানকে হত্যায় জড়িত থাকার। সংখ্যাগুলো নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। পৃথিবীতে সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা মায়ের কোল, বাবার ছায়া। পরিবারের বাইরে আর কোথায় বা নিরাপদ আশ্রয় পাওয়া যায়? কিন্তু সেই পরিবারেই আজ শিশুরা হয়ে উঠছে অনিরাপদ। কিন্তু এমন ঘটনা বাড়ছে কেন? কেনই বা মা-বাবা তার প্রিয় সন্তানকে হত্যা করতে দ্বিধা করছেন না?
আমাদের দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের জীবন-যাত্রার মান উন্নত হচ্ছে। তবে জীবনে চলার পথে প্রয়োজনীয়তাও বাড়ছে, চাহিদারও যেন শেষ নেই। আর এই চাহিদা পূরণে মানুষজন ছুটছে টাকার পিছে। টাকা ছাড়া তো জীবন চলবে না। কিন্তু এই টাকার পিছনে ছুটতে গিয়ে যদি চারপাশটা সামাল না দেওয়া যায়, যদি নিজের জীবন বিপন্ন হয়ে ওঠে, তাহলে কী লাভ হবে টাকা-পয়সা দিয়ে? আর এ কারণেই সামাজিকতা কমছে, কমছে দায়িত্ববোধ, মানুষে মানুষে যোগাযোগ। কাছের মানুষদেরই খবর নেওয়া হয় না, আর অন্য মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তো অনেক পরে!
এসব কারণেই সামাজিক বন্ধন বলে যে শব্দটা রয়েছে, তা এই রাজধানীতে বিলুপ্ত হয়ে গেছে প্রায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সময় যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের মাঝে, তাতে হয়তো সামাজিক বন্ধনের কিছুটা হলেও অটুট আছে। কিন্তু এই শহরের আর কোথাও তা নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে বের হলেই সব শেষ। পড়াশোনা শেষ হলেই বন্ধনের গিঁট ঢিলা হতে থাকে। শহরের বসবাসরত মানুষের মধ্যে সৌজন্যবোধও কমছে। ব্যস্ততা আর ব্যস্ততার মাঝে সব ফুরিয়ে যাচ্ছে। ‘হাই আর হ্যালো’র মধ্যে সীমাবদ্ধ শহুরে সম্পর্কগুলো। খুব ভালো সম্পর্ক হলে হয়তো পাঁচ মিনিট সময় পাওয়া যায়, এক কাপ চা পানের সুযোগ হয়। এটাও এখন বিরল ঘটনায় পরিণত হচ্ছে! এই শহরে বসবাসরত আমরা কলেজের কয়জন বন্ধুকে শেষ কবে ফোন দিয়েছিলাম, মনে আছে কারো? বরং শহরের বাইরের কোনো বন্ধু ফোন দিলেও হয়তো ঠিকমতো কথাটাও বলা হয় না। কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা একসঙ্গে একই বেঞ্চে পাশাপাশি বসে এতটা বছর ক্লাস করলাম, এতটা সময় আড্ডা দিলাম, অথচ পড়াশোনা শেষ হলে কয়জনের সঙ্গেই বা যোগাযোগটা রাখি?
আমার রুমমেট বড় ভাই আগে প্রায়ই একটা কথা বলত, ‘খাওয়া-দাওয়া শেষ, কোম্পানি বিদেশ’! কথাটির অর্থ আমি অনেক দিনই বুঝিনি। আসলে বুঝতেও চাইনি। তবে একসময় গিয়ে ঠিকই বুঝেছি। কথাটার মর্ম হলো- তোমাকে যতক্ষণ প্রয়োজন ছিল, ততক্ষণ তোমার সঙ্গে কথা হয়েছে, আলাপ হয়েছে, সম্পর্কও ভালো। কিন্তু প্রয়োজন শেষে তোমাকে আর আমি চিনি না। আবার এমনটাও বোঝায়, নিজের প্রয়োজনে কারো কাছে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করা যায়, কিন্তু প্রয়োজন শেষে তাকে আর চেনা যায় না। এমন-কি রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে ধাক্কা খেলেও না! এই শহরের সম্পর্কগুলো দিন দিন এমনই হয়ে যাচ্ছে।
আর সামাজিক বন্ধন বিলুপ্তির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি মানুষই আত্মকেন্দ্রীক হয়ে উঠছে। নিজের বাইরে বেশিরভাগ মানুষই কিছু ভাবতে পারছে না। নিজের সমস্যা হলেই কেবল সমস্যা, অন্যের সমস্যায় ‘কিছু দেখি নাই’ অবস্থা। রাস্তায় কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকলে কেউ এগিয়ে যায় না। কেউ বিপদে পড়লে অন্যরা এগিয়ে যায়। যার একদম বাস্তব উদাহরণ এখনও চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে উঠছে। কোনোভাবেই ভুলতে পারছি না তা। রাজধানীর উত্তরায় কয়েক দিন আগে গ্যাসের চুলা থেকে আগুন লেগে দগ্ধ হয়ে মারা গেছে একই পরিবারের চারজন। দগ্ধ আরেক শিশু তার মা-বাবা ও দুই ভাইকে হারিয়েছেন। সেদিন পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা যদি এগিয়ে আসত, তাহলে হয়তো চারজনকে মরতে হতো না। দগ্ধ মা সুমাইয়া আক্তার হাসপাতালে মারা যাওয়ার আগে বলেন, ‘ওর বাবার (স্বামীকে বুঝিয়েছেন) কোলে পিচ্চিটা। সাততলা থেকে দৌড়ে নামছি আর চিৎকার করছি। প্রথমে চারতলা ও পরে তিনতলায় ফ্ল্যাটের দরজায় কড়া নাড়লাম। ওরা দরজা খুলল। আমাগো দেইখ্যা দরজাগুলো সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ করে দিল। সব স্পষ্ট মনে আছে। বিল্ডিংয়ের নিচে নামলাম। দেখলাম কত মানুষ। কেউ এগিয়ে আসলো না। সবাই তাকাইয়্যা রইল। পুরা কাপড় তো পুইড়্যা গেল। একটা চটের বস্তা দিয়া শরীরটা জড়াই। আল্লাহ মাফ করুন। মানুষ কত অমানবিক। বিল্ডিংয়ের মহিলারা একটা চাদরও আগাইয়্যা দিল না। বললাম- আমি মহিলা; অন্তত একটা চাদর দেন। কিচ্ছু দিল না। নইলে ওদের একটা চাদর বা তোষকই পুড়ত। আমার বাচ্চারা তো বাঁচত। একটা মানুষও সাহায্য করেনি।’
উত্তরার এই ঘটনাটা আমাদের কী জানায়? প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে হয়তো তাদের সবাইকে বাঁচানো যেত। ফুটফুটে শিশুদের আগুনে জ্বলতে দেখেও কেউ এগিয়ে গেল না। উল্টো দরজা বন্ধ করে দিল। এও কী মানুষের পক্ষে সম্ভব? হয়তো বিশ্বাস হতে চাচ্ছে না, কিন্তু ঘটনা তো পুরোটাই সত্য। আমার প্রশ্ন হলো, নিজের সন্তান হলে কী তারা ফেলে দৌড় দিতে পারতেন কিংবা দরজা বন্ধ করতে পারতেন? মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হলে এটা সম্ভব, এর চেয়ে বাস্তব উদাহরণ আর আশপাশে নেই। মানুষের কথা কী বলব, আমি নিজেই ধীরে ধীরে সেই কাতারে চলে যাচ্ছি। এক সময় যে কারো সমস্যা হলেই মাথায় কাজ করত, এ যদি আমার ভাই হতো কিংবা বোন হতো। আমি যদি ওর জায়গায় থাকতাম কিংবা এই সমস্যায় পড়তাম তাহলে কী হতো? এসব চিন্তা থেকে এগিয়েও যাওয়া হতো। এতে কখনও কখনও আবার ঝামেলায়ও পড়তে হতো, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দারুণ এক প্রশান্তি কাজ করত মনে। যদিও এখন এসব চিন্তাই আসে না খুব একটা! সব কিছু পাশ কাটিয়ে চলতে শিখছি আমিও। মাঝে মাঝেই মনে হয়, আমিও ধীরে ধীরে অমানুষ হয়ে যাচ্ছি!
আর মানুষ যত আত্মকেন্দ্রীক হয়ে যাচ্ছে, ছোট হয়ে আসছে তাদের জগৎ, চিন্তার পরিধি। ফলে বাস্তব ক্ষেত্রে অনেক সময়ই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, এমনও হয় যে সেই সমস্যার সমাধান তো করতে পারছে না, আবার কারও সঙ্গে শেয়ারও করতে পারছে না। ফলে বাড়ছে হতাশা। এতে মাথায় ঢুকছে উল্টাপাল্টা চিন্তা-ভাবনা। বাড়ছে মানসিক অস্থিরতা। আর এসব কারণে পরিবারেও বাড়ছে অশান্তি। এর প্রভাব প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পড়ছে শিশুদের উপরেও। অনেক সময় শিশুদের হত্যার শিকারও হতে হচ্ছে।
আমাদের সমাজে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে দেখা যায়, অন্যের ভালো জিনিসটা নিজের মধ্যে পেতে চাওয়া। অপরের ভালো চাকরি নিজের কেন নাই, অমুকের এত টাকা আমার কেন নাই, আমার কবে এত টাকা হবে, কবে পায়ে পা তুলে খাব, এমন নানান ধরনের চিন্তাভাবনা তরুণ থেকে বয়স্ক সবার মধ্যেই দেখা যায়। আবার মা-বাবারা ভাবেন, তমুকের ছেলে এত ভালো ছাত্র আমার ছেলে কেন ভালো না; ওর ছেলে এ প্লাস পেয়েছে, আমার ছেলে কবে পাবে, কেন পাবে না, না পেলে মুখ দেখাব কেমন করে, এমন নানান প্রবণতা আমাদের মধ্যে খুব বেশি। আর এই না পাওয়ার চিন্তা-ভাবনা অনেককেই বিষিয়ে তুলে! যে বিষ ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। এই বিষ শুধু ব্যক্তিকেই ধ্বংস করে না, অনেক সময় পরিবারকেও ধ্বংস করে দেয়!
পাড়া-প্রতিবেশী, সহকর্মী কিংবা বন্ধুদের আর্থিক উন্নতি নিজের মধ্যে দেখতে পায় এই ধরনের মানুষরা। কিন্তু বাস্তবে যা কখনই সত্য নয়। তারা সবসময় কল্পনার জগতে ভেসে বেড়াতে পছন্দ করেন। অলস প্রকৃতির এসব লোকজন যখন বাস্তবে কোনো কাজে নামে তখন হতাশায় ভোগেন। অন্যের উন্নতির সঙ্গে যখন দেখেন- নিজে অনেক পিছিয়ে আছে, তখন তারা চরম হতাশ হয়ে পড়ে, বাড়তে থাকে মানসিক অস্থিরতা। বাড়ে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা। যে কোনো কিছুতে তারা নেতিবাচক চিন্তা করতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা মনে করেন, তাদের দ্বারা আসলে কিছু করা সম্ভব না। এর প্রভাব পড়ে সব ধরনের কাজে। প্রভাব পড়ে চারপাশের লোকজনের উপরও। আর মা-বাবারা এই ধরনের হতাশায় ভুগলে প্রভাব পড়ে সন্তানের উপর। এসময় কোনো দুর্ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিকও না।
হতাশা বা মানসিক অস্থিরতায় ভুগতে থাকা অনেকেই একপর্যায়ে গিয়ে আত্মহত্যা করে। নিজেকেই আর রাখতে চায় না এই সুন্দর ভুবনে। বেশিরভাগ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে হতাশা বা মানসিক চাপ সহ্য করতে না পারার কারণে। যখন কোনো মানুষের নিজের প্রতি আস্থা থাকে না, নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় না, তখন সে অন্যকেও খুন করতে দ্বিধা করে না।
২০০৬ সালের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর এক জাতীয় জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৪.৬ শতাংশ মানুষই খুব হতাশা ভোগেন। গত ১০ বছরে এই সংখ্যা এখন নিশ্চয়ই বেড়েছে।
আরেকটা বিষয়, ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোয় যেসব মেগা সিরিয়াল হয়, সেগুলোয় কী দেখানো হয়? পরিবারের ভেতরে হিংসা-দ্বেষ ছড়ানো, কীভাবে পরিবারে ফাটল ধরানো যায়, কীভাবে পরকীয়ায় সফল হওয়া যায়? এসব দেখার ফলে অনেকের চাহিদা পরিবর্তন হচ্ছে, বাড়ছে দাম্পত্য জীবনে কলহ। এর প্রভাব সরাসরি পড়ছে পরিবারে এবং পরিবারের নিষ্পাপ শিশুদের উপর।
প্রেম বা পরকীয়া দুইটার স্বাদই নাকি অমরত্বের স্বাদ! যারা প্রেম করে বা প্রেমে পড়েন, তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে আমার যা মনে হয়, কেউ একজন যখন প্রেমে পড়ে, তখন সে উড়তে থাকে! এসময় প্রেমিক ও প্রেমিকার চোখে চোখে কথা হয়। চোখে চোখ পড়লে অনুভূতি পাওয়া যায় দেহের ভেতর। মন হয়ে উঠে চঞ্চল। এক পর্যায়ে কেউ নিজের মধ্যে থাকে না। কখনও কখনও মাতাল হয়ে যায়। হুশ থাকে না, করে ফেলে অনেক কিছু। এটা হোক প্রেম বা পরকীয়া। আর এ কারণে অনেক সময়ই নিজের সন্তানকে হত্যা করেন কেউ কেউ। কখনও পরকীয়া দেখে বা জেনে ফেলায়, কখনও পথের কাটা দূর করতে!
আর প্রেমের ক্ষেত্রে বিয়ের আগেই অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সন্তান এসে যায়। যার পরিণতিতে প্রায়ই খবর পাওয়া যায়, অমুক জায়গায় নবজাতকের লাশ উদ্ধার। কখনও কখনও জীবিত নবজাতককেও উদ্ধার করা হয়েছে। রাজধানীর পুরাতন বিমান বন্দরের জঙ্গলে এক নবজাতককে কুকুরে যখন কামড়াচ্ছিল, তখন নবজাতকের চিৎকার শুনে উদ্ধার করা হয়। আবার পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি যখন কোনো নারীর গায়ে গিয়ে পড়ে। অর্থাৎ অমানুষ পুরুষগুলো যখন ধর্ষণ করে কোনো নারীকে, আর ধর্ষণের কারণে জন্ম নেওয়া শিশুকে কীভাবে সঙ্গে রাখবেন নারী? এক্ষেত্রেও নবজাতককে ফেলে দিতে দেখা যায়। কয়েক দিন আগেই রাজধানীর বেইলি রোডে এ ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া পরিবারের বাইরেও শিশু হত্যার ঘটনা প্রচুর। এমন কি একসঙ্গে চারজনকে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে হবিগঞ্জে। সিলেটে ঘটেছে পিটিয়ে নির্যাতন করে শিশু হত্যা। খুলনায় পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে এক কিশোরকে। কিন্তু এসব হত্যার শেষ কোথায়। বাইরে কী পরিবারে? কোথাও শিশুরা নিরাপদ নয়। এজন্য কী করা প্রয়োজন, তা এখনই ভাবা দরকার।
যেখানে শিশুদের বেড়ে ওঠার কথা হেসে-খেলে, সেখানে স্বার্থপর এই পৃথিবী শিশুদের জন্য দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। এমনিতেই পড়াশোনা আর শাসনের চাপে শিশুরা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছে না। নেই খেলার মাঠ, নেই পড়ার আনন্দ। জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বইয়ের বোঝা। এত সব সমস্যার মধ্যে এখন অনিরাপদ হয়ে উঠছে শিশুদের জীবন। আর কত শিশুর জীবন প্রদ্বীপ নিভে যাবে কিছু বোঝে ওঠার আগেই? প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও শিশু হত্যার খবর পাওয়া যাচ্ছে। পত্রিকায় আসা সংবাদ ছাড়াও হত্যার ঘটনা ঘটছে। এতে স্বাভাবিকভাবেই মনের ভেতর প্রশ্ন জমছে, ‘আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ’ প্রবাদটি সামনে হয়তো পরিণত হবে ‘আজকের শিশু আগামী দিনের লাশ’-এ? কিন্তু আমার এই শঙ্কা মিথ্যায় পরিণত হোক, শিশুরা নিরাপদে বেড়ে উঠুক পরিবারে-সমাজে। আর একটি শিশুও যেন হত্যার শিকার না হয়।
শিশু হত্যা বন্ধে, মানুষের লোভ-লালসা-চাহিদা নিয়ন্ত্রণে, সামাজিক মূল্যবোধ ও দায়িত্ব বাড়াতে, মানুষে মানুষের যোগাযোগ বৃদ্ধিতে, প্রেম-পরকীয়ার ফলাফলে সচেতনতা বাড়াতে, হতাশা নিয়ন্ত্রণে এখনই উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। সরকারি ও সামাজিকভাবে আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু দেশ সমাজের এত সব প্রয়োজন আর চাহিদা মিটাবে কে, কবে?

প্রেম-বিয়ে-পরকীয়া বিষয়ক অদ্ভুতুড়ে আইন

               প্রেম-বিয়ে-পরকীয়া বিষয়ক অদ্ভুতুড়ে আইন





আইনানুযায়ীই চলে দেশ, চলে বিশ্ব। নানা দেশের নানা আইন। এসব আইনের মধ্যে অদ্ভুত কিছু আইনও প্রচলিত আছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে।  

আমেরিকায় আছে এরকম আরো অনেক অদ্ভুত আইন। ইন্ডিয়ানায় প্রতিদিনই গাড়ি কেনা-বেচা করা যায়। শুধু রোববারেই আপনি সেখানে কোনো গাড়ি কেনা বেচা করতে পারবেননা।  

কুকুরের নাম মানুষের নামে রাখা এখন হাল-ফ্যাশন। আমাদের দেশেও এরকম মানুষের নামধারী অনেক কুকুর আছে। শুধু নাম নয়, পদবী ধারী কুকুরও আছে আমাদের দেশে। কিন্তু ফ্রান্সে শুকরের নাম নেপোলিয়ন রাখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অন্য যেকোনো নামই রাখা হোক, তাতে কোনো দোষ নেই। শুধু নেপোলিয়ন রাখা যাবেনা। 

আমাদের দেশে রাতের বেলাতেও অনেক গাড়ির হেডলাইট ঠিকমতো জ্বলেনা। জ্বলবে কি করে? এসব গাড়ির ফিটনেসই নেই। তারপরও দিব্বি চলছে। কিন্তু সুইডেনে রাত আর দিন নেই, শীত আর গ্রীষ্ম নেই-সব সময়ই হেডলাইট জ্বালিয়ে রাখতে হয়। 

মানুষের মৃত্যু কোথায় হবে তা কি আমাদের জানা আছে? যেকোনো জায়গায়ই মানুষের মৃত্যু হতে পারে। কিন্তু ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে মৃত্যুবরণ করা বেআইনি। কিন্তু মৃত্যু বরণ করলে তার শাস্তি কী? 

অস্ট্রেলিয়াতে বাচ্চারা সিগারেট কিনতে পারবে না। এ আইন আমাদের দেশেও আছে। কিন্তু সেখানে বাচ্চাদের  সিগারেট খেতে কোনো বাধা নেই। 

কাক কালো। তাই সাবান চুরি করা কাকেরই শোভা পায়। বুঝি বা এজন্যই অ্যারিজোনায় সাবান চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লে তাকে ওই সাবান দিয়ে গোসল করতে হয়, যতক্ষণ না সাবানটি পুরোপুরি  শেষ হয়।

গাড়ি পারষ্কার করা খুবই কষ্টসাধ্য। যে করে সে-ই জানে। তাই আমাদের দেশের রাস্তাগুলোতে দেখো যায় ময়লা‍ গাড়ির অবাধ বিচরণ। এজন্য আমাদের দেশে কোনো শাস্তির বিধান না থাকলেও রাশিয়ায় গুনতে হবে আপনাকে  জরিমানা। 

পরকীয়ার জন্য খুন আমাদের দেশে অহরহই হচ্ছে। শুধু স্বামীই নয়, পরকীয়ার জন্য সন্তানদেরও হত্যা করা হয় এখন। পরকীয়ার জন্য আইনত এক ধরনের শাস্তির বিধান আছে। কিন্তু তাই বলে খুন করাও বৈধ? হ্যা, হংকংয়ে স্ত্রী পরকীয়া করলে স্বামী তাকে খুনও করতে পারে। শর্ত একটাই-এ খুন করতে হবে খালি হাতে। কোনো অস্ত্র দিয়ে স্ত্রীকে খুন করা যাবেনা।

আমাদের দেশে কোনো মেয়েকে প্রণয়ের প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণতো দূরের কথা, ভবিষ্যতে সে মেয়ের সামনে পড়লেও বিপদের আশঙ্কা আছে। দিন যদিও কিছুটা বদলেছে বৈকি। কিন্তু খোদ জাপানে নাকি কোনো মেয়েকে প্রস্তাব দিলে আইনানুযায়ী তা মেয়েটি গ্রহণ করতে বাধ্য। আমাদের দেশে কোনো ছেলে এরকম প্রস্তাব দিলে তাকে আইনের হাতে তুলে দেয়া হয় এই যা।  

বিয়ের অনেক দিনে হয়েছে? নিজের বিয়ের তারিখটি আর কিছুতেই মনে করতে পারছেন না? বড়ই বিপত্তির কথা। এমন বিপাকে অনেকেই পড়েছেন সন্দেহ নেই। তাই ‍অনেকে বছরে মাঝে মাঝেই এ দিনটি মনে রাখার চর্চা করেন। স্ত্রীর জন্মদিনের কথা ভুলে গেলেও আছে একই বিপত্তি। সামাওয়ে তাই আইন করে স্ত্রীর জন্মদিন মনে রাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সেখানে বউয়ের জন্মদিন ভুলে যাওয়া বেআইনি। 

তুরস্কে প্রতিবেশীর ছেলেমেয়ে, বউ, চাকর-বাকরের প্রেমে পড়া নিষেধ। এটাতো স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে পোষা প্রাণীর প্রেমেও পড়া যাবেনা? তুরস্কে প্রতিবেশির পোষা প্রাণীর প্রেমে পড়াও আইনত নিষিদ্ধ।

আমেরিকার গুয়ামে কোনো কুমারী মেয়ে বিয়ে করতে পারে না। সেখানে আছে কিছু পেশাদার পুরুষ। যারা অর্থের বিনিময়ে কুমারীত্বের অভিশাপ মোচন করে। কিন্তু বিয়ে হলেই হবে না। বাসর রাতে শাশুড়ির উপস্থিতি বাধ্যতামূলক? হ্যা, কলাম্বিয়ায় মেয়ের বাসর রাতে তার মায়ের উপস্থিতি আইনত বাধ্যতামূলক! 

মাসে একবার বউ পেটানো যাবে-একথাতো আমরা সবাই জানি। তবে ভুল করেও একাজটি আমাদের দেশে করতে যাবেন না। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী আছে কঠোর শাস্তি। কিন্তু আরাকানসাসে মাসে একবার বউ পেটানো যায় বটে। একবার মানে একবারই। দুইবার বউ পেটালে কিন্তু আছে শাস্তি।

বউ পেটানো নিয়ে আছে আরো আইন। নেভাদায় বউ পিটিয়ে কেউ ধরা পড়লে তাকে আট ঘণ্টা বেঁধে রাখা হয়। বুকে লিখে দেয়া হয় 'ওয়াইফ-বিটার'। আমাদের দেশে বউ পেটালে? বাপের বেটা আর কি! 

এরকম আরো অসংখ্য অদ্ভুত আইন রয়েছে সারা বিশ্বে। 

‘হিরো’ হতে চাওয়াই জুনায়েদের পরিকল্পনা

‘হিরো’ হতে চাওয়াই জুনায়েদের পরিকল্পনা



নিজে কিছু না করতে পারা, মাদকের ভুল জগতে ঢুকে পড়ে এলোমেলো জীবনযাপন আর হতাশা থেকে মেয়েদের কাছে বাড়তি ‘অ্যাটেনশন’ (মনোযোগ) পেতেই ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে কিশোর জুনায়েদ। নুরুল্লাহকে মারধর করা থেকে শুরু করে ফেসবুকে ভিডিও আপ করে ‘হিরো’ হতে চাওয়া সবই তার পরিকল্পনার অংশ বলেই দাবি করছে নুরুল্লাহর বন্ধুরা। তারা বলছে, যেহেতু নুরুল্লাহর সঙ্গে কোনও বিরোধের ক্লু খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, সেহেতু নুরুল্লাহকে মেরে ভিডিও ছড়িয়ে মেয়েদের সে কত সম্মান করে এটা প্রমাণ করতে চেয়েছিল বলেই আমাদের মনে হচ্ছে।


শুরুতে ফেসবুকে ভিডিও ছড়িয়ে পড়া দেখে মনে হয় মেয়ে বন্ধুকে ঘিরে এক কিশোর মারধর করেছে আরেক কিশোরকে। কেউ একজন সে দৃশ্য ধারণ করেছে। যে মারছে সে ভিডিও ধারণকারীকে নির্দেশনা দিচ্ছে আরেকটু ক্লোজ ভিডিও করার। আর ভিডিও ধারণকারী তাকে আরেকটু আস্তে মারতে বলছে। আর যে মার খাচ্ছে সে পুরো সময়ই ‘কিছু একটা ভুল বুঝাবুঝি’ হচ্ছে দাবি করছে। পরে গত সোমবার সে ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় জুনায়েদের নামে একটি মামলাও হয়েছে।
এদিকে তিন দিনেও জুনায়েদের কোনও খোঁজ পায়নি পুলিশ। ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আযম মিয়া বলেন, আমরা তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। তার বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা ও আইসিটি অ্যাক্টে মামলা হয়েছে।
ধানমন্ডির বিভিন্ন কলেজ ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা পার্টি করা বা বন্ধুদের সঙ্গে ‘হ্যাং আউট’ এর জীবনযাপনে অভ্যস্ত তারা জুনায়েদকে চেনে। কারণ তার ছোট একটি র‌্যাপ ব্যাণ্ডদল আছে। জুনায়েদ তার বাসার ঠিকানাও একেক সময় একেকরকম বলতো। তবে তার ‘বড়ভাই’দের সঙ্গে যোগাযোগ ভালো এটা সবাইকেই বলতো।

১০০ শতাংশ খাঁটি, বিশুদ্ধ ভার্জিন




নারীরা অধিকাংশ সময়ে স্বামী বা প্রেমিকের কাছে নিজেকে ভার্জিন (কুমারী)বলেই তুলে ধরতে পছন্দ করেন৷ জেকে ‘খারাপ’, ‘দুশ্চরিত্র’ বলে জাহির করতে কে না চান? মহিলাদের সাথে পুরুষরাও চান না, তার সম্বন্ধে প্রেমিকা বা তার স্ত্রী খারাপ ধারণা পোষণ করুন কিন্তু বাস্তব চিত্রটি বড়ই বিচিত্র৷ তাহলে চলুন জেনে নিন ভার্জিনটি কত রকম ও কি কি?
১০০ শতাংশ খাঁটি, বিশুদ্ধ ভার্জিনঃ সোজা পাঁচ-ছয়ের দশক থেকে এদের আগমন৷ কস্মিনকালে কোনও পুরুষের হাতটিও ধরেননি, বাকিটা তো দূরের কথা। পাঁচ-সাতের দশকে বা তারও আগে এমন ভার্জিন পাওয়া যেত ঘরে ঘরে। এখনও পাওয়া যায়। কিন্তু সে সংখ্যাটা কম৷ বাবা-মায়ের অসম্ভব বাধ্যের। গুরুজনের অনুমতি ছাড়া কোনও পুরুষের সঙ্গে প্রকাশ্যে কথাও বলেন না তারা। তাই সাবধান! এমন নারীকে প্রেম প্রস্তাব দেওয়ার আগে ভেবেচিন্তে এগোবেন। আগে বাড়ির লোকের অনুমতি নেওয়া মাস্ট। বিয়ের কথাটাও সেরে রাখুন।
কেননা, এমন ভার্জিনকে পাওয়ার একটাই রাস্তা। বিয়ে। জেনে রাখবেন বিয়ের আগে এঁদের ‘পাওয়া’ প্রায় অসম্ভব৷ যদি সত্যিই বিয়ে করার জন্য মনস্থির করেন, তবেই এগোবেন৷
দুষ্টু ভার্জিনঃ এদের কনসেপ্ট – বিয়ে পর্যন্ত কে অপেক্ষা করবে ? তবে যাই হোক, আসল কাজটা নট অ্যালাউড। ওসব রিস্কের মধ্যে নেই৷ এরা গোপনে কিছুটা এগোন বই কী৷ কিন্তু ওই একটি জিনিস বাদ দিয়ে। সেটা হতে পারে একমাত্র বিয়ের পর। প্রেমিকের সঙ্গে বাকিটুকুতে মত আছে৷ ওই চুমুটুমু খাওয়া আর কী৷ খুব রোম্যান্টিক মেজাজে থাকলে আরও কিছুটা এগোতে পারে৷ দেহের সর্বাঙ্গে শিহরণেও তখন খুব একটা আপত্তি থাকে না৷ কিন্তু ব্যাস৷ ওই একটি জায়গায় গিয়ে ব্রেক৷ তারপর “না”৷ এদের সঙ্গে প্রেম করতে হলে ধৈর্য ধরতে হবে৷ জেনে রাখবেন সবটুকু পেতে গেলে, বিয়ে কিন্তু মাস্ট৷
ননভেজ ভার্জিনঃ এরা এক কথায় লাকি৷ কিছুদিন বন্ধ থাকলেই সবকিছু যেন সেই আগের মতো৷ নতুন আনকোড়া৷ ফলে কারও বোঝার উপায় থাকে না, যে ইনি অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, না অনভিজ্ঞ৷ ভাবপ্রকাশেও অবিকল সেই আগের ঘটনার রিপ্লে৷ নতুন বয়ফ্রেন্ডের কাছে নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ৷ ফলে বোঝে কার সাধ্য৷ ইঙ্গিত পেলে, এগোতে পারেন৷ সম্মতি পেলে, এগিয়ে যান৷তবে কোনওমতেই জোরজবরদস্তি নয়৷ আজকাল আইনকানুন খুব শক্ত৷ ভুলচুক হয়ে গেলে বিপদে পড়বেন।
- See more at: http://start-on786.blogspot.com

চারদিকে এখন তার জয়জয়কার

আইসিসি ওয়ার্ল্ড টোয়েন্টি২০ আসরে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বাঁ-হাতি ওপেনার তামিম ইকবাল। চারদিকে এখন তার জয়জয়কার। শুধু বাইশ গজে নয়, ২৬ বছর বয়সী এই তারকা আলো ছড়িয়েছেন মাঠের বাইরেও। বিজ্ঞাপন ভুবনে তার ব্যাপক চাহিদা।

গোল্ডমার্ক বিস্কুটের একটি বিজ্ঞাপনে চিত্রশিল্পী, রাঁধুনি ও বেহালাশিল্পীর ভূমিকায় তামিমের হাস্যরসধর্মী উপস্থিতি দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে। ‘আমি জিতলেই জিতে যায় মা’, ‘আড়াই টাকার জিনিস হাজার টাকার ফায়দা’, ‘সব বকওয়াস বন্ধ’, ‘বয়স তো মাত্র ২৩, এখন না পটালে কখন?’- তার আওড়ানো এসব সংলাপ ভক্ত, সমর্থক ও দর্শকের মুখে মুখে শোনা যায়। তার সর্বশেষ যে দুটি বিজ্ঞাপন পর্দায় এসেছে সেসব নিয়ে বলি। 

দূরবীনে চোখ রেখে দূর গাঁয়ের এক শিশুর চড়াই-উতরাই দেখছেন তামিম ইকবাল। আলোর অভাবে ঠিকভাবে পড়াশোনা করতে না পারায় শিক্ষকের বকা খেতে হয় শিশুটিকে। তাই বুদ্ধি খাটিয়ে পানির বোতলকে কাজে লাগাতে হার্ডওয়্যার দোকান থেকে কয়েকটি ইলেক্ট্রিক জিনিস কিনে আনেন তামিম। দোকানিকে অবশ্য ঠিকই অটোগ্রাফ দিতে হয়েছে তাকে। ঘরে ফিরে তিনি হয়ে যান মেকানিক্যাল। 

ফ্রেশ প্রিমিয়াম টি’র নতুন বিজ্ঞাপনে রয়েছে এই গল্প। ২ মিনিট ২০ সেকেন্ড ব্যাপ্তির বিজ্ঞাপনটি নির্মাণ করেছেন হাসান তৌফিক অঙ্কুর। এর জিঙ্গেল লিখেছেন আসিফ ইকবাল। কথাগুলো এমন- ‘মন যখনই না পারারই ব্যথা নিয়া কান্দে/ইচ্ছগুলো জেদের বশে ধীরে জমাট বান্ধে/ছটফটে এই মন পাখিটা ওড়াল দিতে চায়/ওড়াল দিতে চায়, ওড়াল দিতে চায়/আলোরই আশায়, আলোরই আশায়... ছোট ছোট চোখে ওই স্বপ্ন খেলা করে/ব্যথা মুছে কবে বলো আসবে আলো করে/শেকল ভাঙা জেদে আমার সময় কেটে যায়, আলোরই আশায়...’

এদিকে গত বছরের ডিসেম্বরে নিজের মায়ের গল্প নিয়ে সাজানো বিজ্ঞাপনে মডেল হয়ে প্রশংসিত হন তামিম। এতে তার ক্রিকেটার হওয়ার লড়াই, নার্ভাস নাইনটিজে পড়ার পর মায়ের দুশ্চিন্তার দিকগুলো দর্শককে আবেগপ্রবণ করেছে। ফ্রেশ ফুল ক্রিম মিল্ক পাউডারের বিজ্ঞাপনটির নির্দেশনা দিয়েছেন অমিতাভ রেজা। তার নির্দেশনায় ম্যাক্স ফেয়ারনেস মাল্টি এক্সপার্ট ও গ্রামীণফোন ইন্টারনেট ফর অল বিজ্ঞাপনেও মডেল হন তামিম। 

সাকিব ফাহাদের নির্দেশনায় গোল্ডমার্ক বিস্কুট, গাজী শুভ্রর নির্দেশনায় ফেয়ার অ্যান্ড লাভলী ম্যাক্স ফেয়ারনেস ও ম্যাক্স ফেয়ারনেস ফেসওয়াশ, আহমেদ জামান সঞ্জীবের নির্দেশনায় স্যানমার মহানগর গ্রিন পার্ক, নকিয়া, গ্রামীণফোন দেয়ার খুশি, গ্রামীণফোন গেম চেঞ্জার, বাংলা ট্র্যাকার, ডানোর বিজ্ঞাপনে দেখা গেছে তামিমকে। বিশ্বকাপ মঞ্চে ধারাবাহিকতা ধরে রাখলে দেশে ফেরার পর তাকে নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়ে যাবে নির্মাতাদের মধ্যে, এ নিয়ে সন্দেহ নেই।